কেউ বলছেন, শিল্পী সমিতির নির্বাচনের দিন গভীর রাতে ভোট গণনার কক্ষে পেছন দরজা দিয়ে ঢুকেছেন শাকিব। কেউবা বলছেন ভোট গণনা প্রভাবিত করতে তিনি সেখানে গেছেন। কেউ কেউ বলছেন আরও নানান কথা। আসলে কী হয়েছিল সেই রাতে? ভোট গণনার কক্ষে থাকা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী চিত্রনায়িকা মৌসুমী এ বিষয়ে মুখ খুললেন। ঘটনার দুদিন পর সোমবার এ বিষয়ে কথা বলেন তিনি।
মৌসুমী বলেন, ‘আমরা সবাই তখন ভোট গণনা রুমে বসা। এমন সময় হঠাৎ সেখানে শাকিবকে দেখতে পেলাম। চোখে ঘুম ঘুম ভাব। তার ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই পরিস্থিতি থমথমে হয়ে গেল। এসেই সে বলল, “শিল্পীরা আমার কাছে অভিযোগ করেছেন, তাই পরিস্থিতি দেখতে এসেছি। আমি তো ঘুমিয়ে ছিলাম, ফোন পেয়ে ঘুম থেকে উঠেই চলে এলাম।” আমি বললাম, ওহ আচ্ছা।’
এরপর শাকিব আপিল বোর্ডের সদস্যদের উদ্দেশে কথা বলেন। মৌসুমী জানান, শাকিব ঢোকার আগ পর্যন্ত ভোট গণনা কক্ষে আপিল বোর্ড সদস্য খোরশেদ আলম খসরু ভাই ছিলেন। এরপর সেখানে আসেন দিলু ভাই (নাসিরুদ্দীন দিলু)। শাকিব অভিযোগ করে বলতে লাগলেন, আপনারা তো নির্বাচনকে সুষ্ঠু অবস্থায় রাখছেন না। আপনাদের কারণে নির্বাচন প্রভাবিত হয়ে যাচ্ছে। আপনাদের তো এখানে থাকার কথা না। আপনারা তখনই আসবেন, যখন কোনো প্রার্থী আপনাদের কাছে অভিযোগ করবেন।
মৌসুমী এ-ও জানান, শাকিবের মুখে কথা শোনার একপর্যায়ে খসরু ভাই রেগে যান। তিনি চিৎকার করে বলে উঠলেন, ‘তুমি বারবার খোঁচাচ্ছ কেন?’ তখন পাল্টা জবাবে শাকিব বলল, আমি এখনো সভাপতি, আসতেই পারি। অভিযোগ পেয়েছি, আমাকে দেখতে হবে না, জানতে হবে না। পরে তো শিল্পীরাই আমার কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইবেন। এরপর খসরু ভাই আরও চিল্লাচিল্লি করেন। অবস্থা এমন হয়ে যায়, আমি ভয় পেয়ে যাই। কেউ আর কথা বলতে চাচ্ছিল না।’
এ বিষয়ে আপিল বোর্ডের সদস্য খোরশেদ আলম খসরুর সঙ্গে আজ সন্ধ্যায় কথা হলে তিনি বলেন, ‘সভাপতি হিসেবে তিনি (শাকিব খান) আসতেই পারেন। তাঁকে আমরা স্বাগতও জানিয়েছি। কিন্তু তিনি তখন স্বাভাবিক ছিলেন না। তাই তাঁকে চলে যেতে অনুরোধ করেছি। আর মৌসুমী ম্যাডাম যেসব কথা বলেছেন তা সত্য নয়।’
আপিল বোর্ড সদস্যদের সঙ্গে কথাবার্তার একপর্যায়ে ভোট গণনা কক্ষের বাইরে থেকে চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে পান মৌসুমী। তিনি বলেন, ‘ভোট গণনা রুমে থাকা পুলিশ সদস্যরা তখন বলল, বাইরে চিল্লাচিল্লি হচ্ছে উনাকে (শাকিব খান) কেন এখানে বসতে দিচ্ছেন? উনার জন্যই তো চিল্লাচিল্লি হচ্ছে। উনাকে তাড়াতাড়ি গাড়িতে দিয়ে আসেন। তখন আমি বললাম, বাইরে চিল্লাচিল্লি হচ্ছে, ও কি একা যাবে? মিশা তখন বলল, আমি দিয়ে আসি। নিশ্চিত হলাম। ভাবলাম, মিশা যেহেতু শাকিবকে দিয়ে আসতে যাচ্ছে, তাহলে আর কোনো সমস্যা হবে না। আমরাও কাজে মন দিলাম।’
মৌসুমী বলেন, ‘পরে শুনলাম, বাইরে তাঁকে (শাকিব) মেরেছে। লাঞ্ছিত করেছে। সবকিছু মিলে আমি ইনসিকিউরড ফিল করতে থাকলাম। আমি জানি, আমার স্বামী ওমর সানী এফডিসির পরিচালক সমিতিতে বসে আছেন, সন্তান আমাকে নিতে এসেছে।’
মৌসুমী বলেন, শাকিবের সঙ্গে সেদিন রাতে যা ঘটেছে, তা শিল্পী সমাজের জন্য অপমান। সে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া শিল্পী। জাতীয় সম্পদ। তাঁর গায়ে হাত তোলার মানে সমগ্র শিল্পী সমাজের গায়ে হাত তোলা। এরপর তো কেউ এফডিসিতে ঢুকতেই সাহস পাবেন না বলেও জানান মৌসুমী।